সংবাদ শিরোনামঃ
ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেরাও, প্রধান শিক্ষক-দপ্তরী আটক

ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেরাও, প্রধান শিক্ষক-দপ্তরী আটক

নিজস্ব প্রতিনিঃ

 

ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াসিমলা ইউনিয়নের স্বরাব্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুর রহমান ও দপ্তরী সাইফুল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ। অভিভাবক ও গ্রামবাসির অবরোধের মুখে রবিবার বিকেল তিনটার দিকে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আটক করা হয়।

স্বরাব্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছ্ত্রাীর অভিভাবক সরাব্দীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম, ইউনুছ গাজী, ৫ম শ্রেণীর তিন ছাত্রীর অভিভাবক যথাক্রমে শহীদুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, আরিজুল ইসলাম ও চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীর অভিভাবক নুর ইসলাম জানান, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুর রহমান দুপুরে টিফিন খাওয়ার সময় এক এক করে ছাত্রীদের দোতলায় ডেকে নিয়ে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিত। একপর্যায়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীর এক অভিভাবক শাহীনুর রহমান তিন মাস আগে তার মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে থানায় অভিযোগ করেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক আশরাফুর রহমান মুচলেকা দিয়ে ও ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান। এরপরও থেমে থাকেনি প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

সম্প্রতি ৫ম শ্রেণীর তিনজন, চতুর্থ শ্রেণীর একজন ও তৃতীয় শ্রেণীর দুইজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ব্যাপারে তারা অবহিত হন। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। একইভাবে বিদ্যালয়ের দপ্তরী সাইফুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বাধ্য হয়ে এক হাজারের বেশি অভিভাবক ও গ্রামবাসি একত্রিত হয়ে রবিবার সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বিকেল তিনটার দিকে উপপরিদর্শকব মিলন বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশ এসে প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তারা অবরোধ তুলে নেন।

স্বরাব্দীপুর গ্রামের শোকর আলী, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল জলিল খাঁ, সাবেক ইউপি সদস্য ডাঃ আব্দুল কাদের ও বর্তমান ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম জানান, উত্তর কালিগঞ্জ সরকাুির প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছনকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালিন প্রধান শিক্ষক আশরাফুর রহমান ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে লাঞ্ছিত হন। এরপরও তাকে নিজ গ্রামের স্বরাব্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরও তার স্বভাব ও নৈতিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি। বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের সাথে তারাও রবিবার সকাল ১০টায় ওই বিদ্যালয় ঘেরাও কর্মসুচিতে অংশ নেন।

স্বরাব্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুর রহমান ও দপ্তরী সাইফুল্লার সঙ্গে রবিবার বিকেলে তাদের মোবাইল ফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে স্বরাব্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজমুল হুদা জানান, প্রধান শিক্ষক আশরাফুর রহমান ও দপ্তরী সাইফুল্লাহ এর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। তবে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে তার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। এরপরও খুব শীঘ্র বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী সভা ডেকে প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভাড়াসিমলা ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নাঈম জানান, যৌন হয়রানির শিকার কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। যেহেতু বিষয়টি থানায় অভিযোগ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরীকে ধরে নিয়ে গেছে।

কালিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রবিবার একটি মিটিং এ থাকাকালিন তিনি সরাব্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেরাও করার বিষয়টি জানতে পারেন। যেহেতু তার কাছে কোন অভিযোগ করা হয়নি সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক তার কিছু করার নেই।

কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক ইয়ার আলী জানান, তিনি সাতক্ষীরা থেকে একটি মিটিং সেরে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কালিগঞ্জ ফিরছেন। থানায় যেয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।

কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক নকীব পান্নু আহম্মেদ জানান, গণরোষের হাত থেকে বাঁচাতে স্বরাব্দীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুর রহমান ও দপ্তরী সাইফুল্লাহকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিভাবক মনিরুল ইসলাম বাদি হয়ে রবিবার বিকেলে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাতক্ষীরা থেকে ফিরে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগীতায়- সুন্দরবন আইটি লিমিটেড